অক্ষয় ভগত সাইকেলের প্যাডেলে ১৯ দেশ জয় করে পুরুলিয়ার গর্ব From Purulia to the World Akshay Bhagat Cycling Adventure
অক্ষয় ভাগতের বিশ্বভ্রমণ: সাইকেলের প্যাডেলে ১৯টি দেশ জয় মাত্র ৯ মাসে
পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি থানার অন্তর্গত বুড়দা গ্রামের এক সাধারণ যুবক আজ সারা বিশ্বের কাছে এক অনন্য প্রেরণা হয়ে উঠেছেন। তাঁর নাম অক্ষয় ভগত। ছোটবেলা থেকেই অভিযানের নেশা, সাহসী স্বপ্ন আর সীমাহীন অধ্যবসায়ের ফলে তিনি এমন এক কীর্তি গড়লেন, যা শুধু পুরুলিয়া নয়, গোটা বাংলার গর্ব। মাত্র সাত মাসের মধ্যে অক্ষয় সাইকেল চালিয়ে ঘুরে এলেন ১৯টি দেশ।
শুরু নিজের মাতৃভূমি থেকে
অক্ষয়ের জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি থানার অন্তর্গত বুড়দা গ্রামে। চেমটাবুরু পাহাড়ের সৌন্দর্য আর প্রকৃতির টানে ভরপুর এই ছোট্ট গ্রাম বুড়দা থেকেই তাঁর অভিযাত্রার সূচনা। নিজের মায়ের আশীর্বাদ আর গ্রামের মানুষের শুভকামনা সঙ্গে নিয়ে তিনি শুরু করলেন এক বিশ্বভ্রমণের যাত্রা যেখানে ভ্রমণের মাধ্যম ছিল শুধুই তাঁর বিশ্বস্ত সাইকেল।
পথের প্রথম অধ্যায়: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
তাঁর যাত্রা শুরু হয় থাইল্যান্ড থেকে। ব্যাংককের ব্যস্ত রাস্তা থেকে শুরু করে গ্রামীণ থাইল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবকিছুই তিনি সাইকেলের চাকার ঘূর্ণনে উপভোগ করেন। সেখান থেকে তিনি প্রবেশ করেন ভিয়েতনাম, লাওস এবং কম্বোডিয়ায়।
ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরের কোলাহল, লাওসের নিরিবিলি পাহাড়ি পথ, আর কম্বোডিয়ার আংকরভাটের ঐতিহাসিক সৌন্দর্য সব মিলিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে ওঠে তাঁর যাত্রার এক রঙিন অধ্যায়।
চীনের বিশালতা আর মঙ্গোলিয়ার প্রান্তর
কম্বোডিয়া পেরিয়ে অক্ষয় পৌঁছলেন চীনে। বিশাল মহাসড়ক, আধুনিক শহর আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধন তাঁকে মুগ্ধ করে। তিব্বতের পার্বত্য পথ পাড়ি দেওয়া ছিল এই অভিযানের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
এরপরের গন্তব্য মঙ্গোলিয়া। অন্তহীন তৃণভূমি, আকাশ ছোঁয়া নীল, আর মরুভূমির শূন্যতা—অক্ষয়ের সাইকেল যেন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে।
রাশিয়া থেকে মধ্য এশিয়া
মঙ্গোলিয়া শেষ করে তিনি প্রবেশ করেন রাশিয়ায়। সাইবেরিয়ার ঠান্ডা হাওয়া, বিশাল অরণ্য, আর দীর্ঘ পথ তাঁকে নতুন করে শক্তি জুগিয়েছিল।
এরপর তিনি আসেন কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তানে। সিল্ক রোডের ঐতিহাসিক পথ ধরে সাইকেল চালাতে চালাতে তিনি অনুভব করেন ইতিহাসের এক জীবন্ত অধ্যায়।
আফগানিস্তান: সাহসের এক নতুন পরীক্ষা
তাঁর যাত্রার অন্যতম কঠিন অংশ ছিল আফগানিস্তান অতিক্রম করা। পাহাড়ি পথ, নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ, এবং কঠোর আবহাওয়া সত্ত্বেও অক্ষয় পিছিয়ে যাননি। তাঁর দৃঢ় মনোবল আর সাইকেলের অবিরাম প্যাডেল তাঁকে নিয়ে যায় নতুন দিগন্তে।
নিজের মাটিতে ফেরা
সব দেশ ঘুরে অবশেষে ০১/০৯/২০২৫ তিনি ফিরে এলেন নিজের মাতৃভূমি, পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ায়। গ্রামের মানুষ তাঁকে বরণ করে নিলেন নায়ক হিসেবে। নয় মাসের নিরলস পরিশ্রম, অজস্র চ্যালেঞ্জ আর অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতার পর তাঁর এই প্রত্যাবর্তন সত্যিই এক মহৎ কীর্তি।
অক্ষয়ের অনুপ্রেরণা
অক্ষয় ভগত শুধু সাইকেল চালাননি; তিনি একটি বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন—
স্বপ্ন দেখো, আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দাও।
শরীর সুস্থ রাখো, প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করো।
অসাধারণ কীর্তি গড়তে বড়ো অর্থ নয়, বড়ো মন দরকার।
তাঁর যাত্রা প্রমাণ করেছে যে, ইচ্ছে আর অধ্যবসায় থাকলে অসম্ভব কিছুই নয়।
যাত্রার অর্জন
১৯টি দেশ জয়। ৯ মাসের নিরবচ্ছিন্ন ভ্রমণ।
হাজার হাজার কিলোমিটার সাইকেল চালনা।
বহু সংস্কৃতি, ভাষা, খাবার ও মানুষের সঙ্গে পরিচয়।
পুরুলিয়ার গর্ব
আজ অক্ষয় ভগত শুধু পুরুলিয়ার নয়, সমগ্র ভারতের এক অনুপ্রেরণা। তাঁর এই বিশ্বভ্রমণ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন