মালতী মুর্মু মাটির ঘরে শিক্ষার আলো, মাটির ঘর থেকে ক্লাসরুম !! Malti Murmu: From Mud House to Classroom

 


মালতী মুর্মু: আদিবাসী গ্রামে শিক্ষার আলো, পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার দুর্গম জিলিংসেরেং (Jilingseling) গ্রামে এক অসাধারণ নারীর গল্প লুকিয়ে আছে। তিনি মালতী মুর্মু (Malti Murmu) , যিনি শিক্ষার মাধ্যমে একটি গ্রামের ভবিষ্যৎ বদলে দিচ্ছেন। কোনো সরকারি সাহায্য, এনজিও-র সমর্থন বা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ছাড়াই, মালতী তার মাটির ঘরকে একটি পাঠশালায় রূপান্তরিত করেছেন, যেখানে প্রতিদিন ৪৫ জনেরও বেশি শিশু পড়াশোনা করতে আসে। এই গল্প শুধু শিক্ষার নয়, একটি অদম্য ইচ্ছাশক্তির গল্প।



২০১৯ সালে, বিয়ের পর মালতী জিলিংসেরেং গ্রামে এসেছিলেন। ঘন জঙ্গল আর পাহাড়ে ঘেরা এই গ্রামে কোনো পাকা রাস্তা ছিল না, বাস ছিল না, এমনকি স্কুলও ছিল দূরবর্তী। নিকটতম স্কুল ১০-১২ কিলোমিটার দূরে, যেখানে পৌঁছতে শিশুদের ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যেতে হতো। এই পরিস্থিতিতে অনেক শিশুই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। মালতী, যিনি নিজে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন, এই অবস্থা দেখে চুপ থাকতে পারেননি। তিনি স্থির করলেন, তিনি নিজেই এই শিশুদের জন্য কিছু করবেন।



মালতী তার মাটির ঘরের পাশে একটি টিনের ছাউনি দিয়ে ছোট্ট একটি কুটির তৈরি করলেন। মাটির দেয়ালে ঝুলিয়ে দিলেন একটি ব্ল্যাকবোর্ড, মেঝেতে পাতলেন চট, আর শুরু করলেন পড়ানো। কখনো কোলে শিশু নিয়ে, কখনো গৃহস্থালির কাজ সেরে, তিনি শিশুদের পড়াতে শুরু করেন। কোনো বেতন ছাড়া, কোনো তহবিল ছাড়া, শুধুমাত্র মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর শিক্ষার প্রতি দায়বদ্ধতার জোরে তিনি এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তার এই পাঠশালায় শিশুরা শুধু অক্ষর শেখেনি, তারা স্বপ্ন দেখতেও শিখছে। মালতীর কাছে পড়া শিশুরা আজ গণিত, বাংলা, আর বিজ্ঞানের প্রাথমিক ধারণা শিখছে। তার পড়ানোর পদ্ধতি এতটাই সরল আর আকর্ষণীয় যে শিশুরা প্রতিদিন আনন্দের সঙ্গে ক্লাসে আসে। মালতী বলেন, “শিক্ষা শুধু অক্ষর শেখা নয়, এটা শিশুদের জীবন বদলে দেওয়ার একটি হাতিয়ার।”



মালতীর এই উদ্যোগ শুধু জিলিংসেরেং গ্রামের জন্যই নয়, সমগ্র সমাজের জন্য একটি উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেন যে বড় পরিবর্তন আনতে বড় পদ বা অর্থের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি আর নিষ্ঠার। তার এই কাজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, এবং অনেকেই তাকে সমর্থন জানাচ্ছেন। তবে মালতী চান না কোনো প্রশংসা, তিনি চান শিশুরা তাদের স্বপ্ন পূরণ করুক।



মালতী মুর্মু আমাদের শেখান যে, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কোনো বড় মঞ্চের প্রয়োজন নেই। একটি মাটির ঘর, একটি ব্ল্যাকবোর্ড, আর একটি মনের জোরই যথেষ্ট। তার এই গল্প আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে, আমাদের সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য এগিয়ে আসতে।

মন্তব্যসমূহ