গড়পঞ্চকোট পুরুলিয়া জেলার এক অপরূপ ঐতিহাসিক গন্তব্য. Garh Panchkot Exploring Purulia’s Ancient Fort and Natural Splendor

 গড়পঞ্চকোট (Garh Panchkot: পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার এক অপরূপ ঐতিহাসিক গন্তব্য

পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার পাহাড়ি পাদদেশে অবস্থিত গড়পঞ্চকোট Garh Panchkot একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর স্থান। "পঞ্চকোট" নামটি এসেছে "পাঁচটি গোত্রের দুর্গ" থেকে, যা এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের ইঙ্গিত দেয়। পঞ্চেট পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এই প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ আজও পর্যটকদের মন কাড়ে। প্রকৃতি ও ইতিহাসের এক অনন্য উদাহরণ গড়পঞ্চকোট, যেখানে পাহাড়, জঙ্গল, আর ঐতিহাসিক নির্মাণশৈলী একত্রে মিলিত হয়।



গড়পঞ্চকোটের ঐতিহাসিক পটভূমি

গড়পঞ্চকোটের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। এই দুর্গটি ছিল সেন রাজবংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ১৮ শতকে, যখন বাংলার নবাব আলিবর্দী খাঁর শাসনকালে মারাঠা বর্গীরা বাংলায় আক্রমণ চালায়, তখন এই দুর্গটি তাদের হাতে ধ্বংস হয়। কথিত আছে, মারাঠা আক্রমণের সময় রাজার ১৭ জন রানী নিকটবর্তী একটি কুয়োতে আত্মহত্যা করেছিলেন। এই ঘটনা গড়পঞ্চকোটের ইতিহাসে একটি করুণ অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে। আজও দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, প্রাচীন মন্দির, এবং প্রহরী টাওয়ারগুলো ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ

গড়পঞ্চকোট শুধু ঐতিহাসিক নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও বিখ্যাত। পঞ্চেট পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই স্থানটি সবুজ জঙ্গল, পাহাড়ি ঢাল, এবং দামোদর নদীর মনোরম দৃশ্যে ঘেরা। শীতকালে এখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম হয়, যা পর্যটকদের জন্য আদর্শ। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দূরবর্তী দিগন্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এছাড়া, এখানকার বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদের বৈচিত্র্য প্রকৃতিপ্রেমীদের মন জয় করে।



কীভাবে পৌঁছাবেন?

কলকাতা থেকে গড়পঞ্চকোটের দূরত্ব প্রায় ২৫২ কিলোমিটার। আসানসোল হয়ে সড়কপথে এখানে পৌঁছানো যায়। নিকটতম রেল স্টেশন বারাকর বা আদ্রা, যেখান থেকে গাড়ি বা ট্যাক্সি নিয়ে গড়পঞ্চকোট পৌঁছানো সম্ভব। আসানসোল থেকে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার এবং পুরুলিয়া থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে এই স্থানটি অবস্থিত। পথে দামোদর নদীর তীরবর্তী দৃশ্য যাত্রাকে আরও আনন্দদায়ক করে।

দর্শনীয় স্থান

গড়পঞ্চকোটে এসে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ যা পুরননির্মাণ করা হয়েছে, সেই পুরনো মন্দির, এবং প্রহরী টাওয়ারগুলো দেখা যায়। পঞ্চেট পাহাড়ের চূড়ায় উঠে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এছাড়া, কাছাকাছি কাল্যাণেশ্বরী মন্দির, মাইথন বাঁধ, এবং স্নেক পার্ক পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ বন বিভাগের রিসোর্টে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে কটেজ থেকে শুরু করে আধুনিক কক্ষ পাওয়া যায়।



কেন যাবেন গড়পঞ্চকোট?

গড়পঞ্চকোট শুধু ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য নয়, প্রকৃতি ও শান্তি খুঁজতে চাওয়া পর্যটকদের জন্যও আদর্শ। কলকাতার কোলাহল থেকে দূরে একটি শান্ত ও সুন্দর গন্তব্য হিসেবে এটি উপযুক্ত। এখানে এসে আপনি ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যেতে পারেন, পাশাপাশি প্রকৃতির কোলে সময় কাটাতে পারেন। শীতকালে পিকনিকের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় স্থান।

পরিপূর্ণতা 

গড়পঞ্চকোট পশ্চিমবঙ্গের একটি লুকানো রত্ন। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এবং শান্ত পরিবেশ এটিকে একটি আদর্শ উইকএন্ড গন্তব্য করে তোলে। পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে একটি স্মরণীয় ভ্রমণের জন্য গড়পঞ্চকোট আপনার তালিকায় থাকা উচিত। তাই, পরের ছুটিতে এই স্থানে ঘুরে আসুন এবং ইতিহাস ও প্রকৃতির অপূর্ব মেলবন্ধনের সাক্ষী হোন।

মন্তব্যসমূহ